Breaking

Thursday 6 February 2020

ধ্বংস করা হলো সেই ৯’শ কোটি টাকার কোকেন

পাঁচ বছর আগে চট্টগ্রাম বন্দরে জব্দ হওয়া ৩৭০ লিটার কোকেন ধ্বংস করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশে বলিভিয়া থেকে আনা এই সব কোকেন গতকাল বুধবার দুপুরে পতেঙ্গা র‌্যাব-৭ এর দফতরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের উপস্থিতিতে ধ্বংস করা হয়। ২০১৫ সালে কোকেনের চালানটি জব্দ করা হয়। এসব মাদকের বাজারমূল্য আনুমানিক ৯ হাজার কোটি টাকা বলে জানিয়েছেন র‌্যাব-৭ চট্টগ্রামের অধিনায়ক মশিউর রহমান জুয়েল ।
এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মাদক নির্মূলে সরকার জিরো টলারেন্স নীতিতে কাজ করছে। দেশে মাদক নির্মূলে তিনভাগে কাজ করা হচ্ছে। টার্গেটে না পৌঁছানো পর্যন্ত শুদ্ধি অভিযান চলবে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী এই কাজ করছে আইশৃঙ্খলা বাহিনী। মাদক, জঙ্গিবাদ নির্মূলে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে র‌্যাব ও পুলিশ বাহিনী। মাদক কোমলমতি শিশুসহ সমগ্র জাতিকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দরে ২০১৫ সালে কোকেন জব্দের ঘটনায় সবাইকে তদন্তের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। আন্তর্জাতিক চোরাচালান রুট হিসেবে কেউ যাতে বন্দরকে ব্যবহার করতে না পারে সেই জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে। র‌্যাব-৭ সদর দফতর সংলগ্ন এলিট হলে আয়োজিত মাদক ধ্বংস ও মাদকবিরোধী প্রচারণা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, মাদকের আগ্রাসন থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করতে সরকারের আইনশৃংঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা শুরু থেকেই নিরলসভাবে কাজ করছে। তারই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব ৪২ হাজার মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার, প্রায় দুই কোটি ইয়াবা, তিন লক্ষাধিক ফেন্সিডিল, ১৭ হাজার বোতল বিদেশি মদ, ২৫ লাখ লিটার দেশিয় তৈরি চোরাই মদ জব্দ করেছে। যা প্রশংসনীয়। মাদক একটি ভয়ংকর নেশা। যিনি একবার এ নেশায় আসক্ত হবেন তিনি আর বের হতে পারেন না। মাদক সর্বনাশা। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যাতে মাদক ও জঙ্গিবাদে না জড়ায় সেটি নিয়ে কাজ করছি। সুন্দরবন একসময় জলদস্যু, বনদস্যুদের অভয়ারণ্য ছিল। কোনো পর্যটক, স্থানীয় জেলে সুন্দরবনে যেতে পারতেন না। কিন্তু র‌্যাবের প্রচেষ্টায় এখন সুন্দরবন জলদস্যুমুক্ত হয়েছে। দেশে ইয়াবা প্রবেশের প্রধান রুট কঙবাজার। সেখানেও র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় তা কমে এসেছে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ বলেন, কোনো মাদক ব্যবসায়ীকে শান্তিতে টিকে থাকতে দিব না। মাদক ব্যবসায়ীরা সমাজের শত্রু। দেশের শত্রু। রাষ্ট্রের শত্রু। মাদকের বিরুদ্ধে র‌্যাব আগেও সোচ্চার ছিল। আগামীতেও থাকবে। যারা মাদক ব্যবসা করেন, তারা মাদক ব্যবসা ছেড়ে দেন। না হয় ভয়াবহ পরিস্থিতির স্বীকার হবেন। আপনার (মাদক ব্যবসায়ী) দ্বারা আপনার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। র‌্যাব কাউকেই ছাড় দিবে না। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন। সেই থেকে র‌্যাব এই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। এটা চলমান থাকবে। এর কোন হেরফের হবে না।
এসময় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের উদ্দ্যেশ্যে র‌্যাবের মহাপরিচালক আরো বলেন, আজকের শিক্ষার্থীরা আগামীর বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিবে। তাই তোমরা মাদক থেকে নিজেদের দূরে রাখবে। খেলাধুলা, নাচ, গান আবৃত্তিতে নিজেদের ব্যাস্ত রাখবে। নিজেদের সুশৃঙ্খল ভবিষ্যত গড়তে মাদকের বিরুদ্ধে অবস্থান নিবে। মাদকের কুফল সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে কাজ করে যাবে।
র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মশিউর রহমান জুয়েলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি, মো. হাবিবুর রহমান এমপি, মো. ফরিদুল হক খান এমপি, পীর ফজলুর রহমান এমপি, চট্টগ্রাম-১১ আসনের এমপি এম আবদুল লতিফ, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক, সিএমপি কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান। এসময় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর চট্টগ্রাম অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মো. মজিবুর রহমান পাটোয়ারী, বিভিন্ন সরকারি ও সামরিক কর্মকর্তাসহ র‌্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে পতেঙ্গা এলাকার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের ১ হাজার শিক্ষার্থীর মাঝে বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী, মাদক ও জঙ্গিবাদ বিরোধী বই বিতরণ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের মাদক ও জঙ্গিবাদ বিরোধী শপথবাক্য পাঠ করান র‌্যাব সদর দফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপরেশনস) কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সরোয়ার। চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পক্ষে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু সালেম মোহাম্মদ নোমান ও চট্টগ্রাম বন্দরের পক্ষে সহকারী ব্যবস্থাপক (এস্টেট) রায়হান উদ্দিন মাদক ধ্বংস কার্যক্রম তদারকি করেন।

উল্লেখ্য যে, ২০১৫ সালের ৬ জুন কোকেন সন্দেহে চট্টগ্রাম বন্দরে সূর্যমুখী তেলের চালান জব্দ করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। ২৭ জুন তেলের চালানের ১০৭টি ড্রামের মধ্যে প্রথমে একটি ড্রামের নমুনায় কোকেন শনাক্ত হয়। পরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর রাসায়নিক পরীক্ষাগারসহ ৪টি পরীক্ষাগারে তেলের চালানের মধ্যে দুটি ড্রামের নমুনায় কোকেন শনাক্ত হয়। এই দুটি ড্রামে ৩৭০ লিটার কোকেন পাওয়া যায়। বলিভিয়া থেকে আসা চালানটির প্রতিটি ড্রামে ১৮৫ কেজি করে সূর্যমুখী তেল ছিল।

চট্টগ্রামে ধ্বংস করা হলো প্রায় ৯’শ কোটি টাকা মূল্যের ৩৭০ লিটার কোকেন। এ যাবতকালের সবচেয়ে বড় কোকেনের চালানটি, সাড়ে ৪ বছর আগে ধরা পড়েছিলো বন্দরে। এই কোকেন পাচার চক্রের সাথে জড়িত দেশি বিদেশি সবাই শনাক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

No comments:

Post a Comment